শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০৪ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
ফারুক হোসেন, সাঁথিয়া পাবনা:
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন এর বিরুদ্ধে মহিলাসহ কয়েকজন রোগিকে মারপিট,ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু, ভর্তি রোগিদের সাথে সকাল সন্ধ্যা ২ বার সাক্ষাৎ (রাউন্ড)এর নিয়ম থাকলেও শুধু সকালে সাক্ষাৎ (রাউন্ড)দেয় এবং অফিস চলাকালীন সময় প্রাইভেট ক্লিনিকে গিয়ে আলট্টা করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা যায়, ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন সাঁথিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদানের পর আবাসিক মেডিকেল অফিসারের পদ শুন্য হয়।সেই সুবাদে সে ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসারের পদ পায়।তখন থেকেই সে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। সে তার প্রেসক্রিপশন প্যাডে ভারপ্রাপ্ত না লিখে সরাসরি আবাসিক মেডিকেল অফিসার লেখেন।
রবিবার (২৪ এপ্রিল) রাত ১০টায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডিউটিরত ২ নার্সকে রাউন্ড সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন,আমরা এসে রাউন্ডের কোন ডাক্তারকে পাইনি।ডাক্তার রাউন্ডে আসবে কিনা তা আমরা বলতে পারবোনা।স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থাকা কয়েকজন রোগী জানান, ডাক্তার মামুন আব্দুল্লাহ প্রতিদিন সকালে একবার আসে আমাদের দেখতে(রাউন্ডে)।আর রাতে শুধু নার্সরা আমাদের দেখাশোনা করেন।
সাঁথিয়া পৌরসভার নয় নম্বর ওয়ার্ডের ২৬ বছরের একটা মেয়ে কান্না জরিত কন্ঠে বলেন,আমি অসুস্থতার কারণে ১০/০৩/২০২০ তারিখে সাঁথিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হই।২১/০৩/২০২০ তারিখ রাত ৮ টায় হটাৎ করেই আমার ওয়ার্ডে এসে ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আপনাকে ছুটি দেওয়া হয়েছে আপনি বাড়ি চলে যান।আমি বললাম স্যার আমি মেয়ে মানুষ এই রাতে কিভাবে একা বাড়ি যাবো।ওনি বললেন এসব আমি জানিনা।ডাক্তার আমার হাতে ছাড়পত্র দেওয়ার সময় আমি মোবাইলে ছবি তোলার চেষ্টা করতেই আমার হাতে থাকা মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।এসময় আমি দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে আসি।সেও আমার পিছু পিছু দৌড়ে এসে আমার গায়ের ওরনা টেনে ধরে টেনে হিঁচড়ে সেবিকা কক্ষে আমাকে নিয়ে যান।এবং রুমের দরজা বন্ধ করে আমাকে অসভ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে।প্রায় ২০ মিনিট পর পুলিশের সহায়তায় আমি ছাড়া পাই।আমি সাঁথিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বরাবর,সাঁথিয়া থানায় এবং সিভিল সার্জন অফিসে লিখিত অভিযোগ করেও কোন সুবিচার পাইনি।
ঘুঘুদহ গ্রামের নুর ইসলাম বলেন,কয়েক মাস আগে আমি আর আমার বোউ নার্সের সাথে একটা সমস্যার ব্যপারে আলাপ করতে সাঁথিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্সের রুমে ঢুকতে যাই।নার্সের রুমে বসে ডাক্তার মামুন ফোনে কিসের যেন ভিডিও দেখতেছিলো।আমাকে দেখেই অসভ্য ভাষায় গালাগালি শুরু করলো তুই এখানে কেন আসছিস।আমি বললাম স্যার গাল পারেন কেন ভালোভাবে বললেই তো চলে যেতে পারি।সে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে দৌড়ে এসে আমাকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে শুরু করে।আমার বোউ এর চিৎকারে নার্স এবং রোগীর লোকজন এসে আমাকে রক্ষা করে ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুনের হাত থেকে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন হাসপাতালের পাশে বাড়ি হওয়ায় সে কাউকেই পরোয়া করেনা।রোগীদের সাথে খারাপ আচরণ করে।এমনকি কয়েকজন রোগীর গায়েও হাত তুলেছে। তাকে মাঝে মধ্যেই অফিস চলাকালীন সময় বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আলট্টা করতে দেখাযায়।
ভুক্তভোগী, রোগী এবং হাসপাতালের স্টাফদের সাথে কথা বলার কয়েকটি ভিডিও এই প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে।
আরো জানা যায়,২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় উপজেলার ধোপাদহ ইউনিয়নের তেতুলিয়া গ্রামের মৃত মোসলেম উদ্দিনের ছেলে আনিছুর রহমান মকুল (৫৫)কে সাঁথিয়া ইতালি সুপার মার্কেটে তার ব্যাক্তিগত চেম্বারে ভূল ইনজেকশনের কারণে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগে ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গণধোলাই দেওয়া হয়েছিল। ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমার যে রাউন্ড ২ বেলা আপনাকে কে বলছে।আমি কার গায়ে হাত দিছি তাকে আমার কাছে নিয়ে আসেন। এসব বানোয়াট।
এ বিষয়ে সাঁথিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার জান্নাতুল ফেরদৌস বৈশাখী বলেন,রাউন্ডের দায়িত্ব আবাসিক মেডিকেল অফিসার ( আরএমও) এর। সকাল,সন্ধ্যায় নিয়মিত আরএমও মামুনই রাউন্ড দেয়।যখন আরএমও থাকেনা তখন আমাদের ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার রাউন্ড দেয়। আজ রাতে রাউন্ড দেয়নাই কেন, আমি এখনি খোঁজ নিচ্ছি।