বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩৭ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী :
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ঘণ্টাখানিক থেকে শুরু করে প্রয়োজনে কয়েক মাস পর্যন্ত থেকে চিকিৎসা নেন বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণ, আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গির রোগী। সঙ্গে থাকে একাধিক স্বজন। সবমিলিয়ে হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে শুরু করে জরুরি বিভাগে প্রতিদিন হাজারো মানুষের পদচারণা। এরমধ্যে ১ হাজার ২০০ বেডের হাসপাতালের সুবিধা নিয়ে আড়াই হাজারের অধিক রোগীর চিকিৎসা সেবা।আবার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রোগের প্রকোপসহ বর্তমান করোনা মহামারীর চিকিৎসা সেবা।
এমন নানা বিষয়ের কারণে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাওয়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কাঙ্খিত স্বাস্থ্যকর সেবা নিশ্চিতের প্রশ্নে অনেকটাই নিস্তেজ ছিলো। আবার ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলে কারো কারো পিছুটানও ছিলো। তবে বর্তমান গ্রীণ, ক্লিন, হেলদি সিটিবান্ধব নেতৃত্ব ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতায় নান্দনিক সৌন্দর্যময়, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও রোগীবান্ধব হচ্ছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এরইমধ্যে এর সুফল পেটে শুরু করেছে রোগীরা।
জানা যায়, কয়েকবছর আগেও রামেক হাসপাতাল ছিলো হাজারো দালালের অভয়াশ্রম। যারা লোকচক্ষুর সামনে হাসপাতাল সর্ম্পকে বিভিন্ন কুৎসা রটিয়ে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যেত। প্রান্তিক রোগীরা চিকিৎসা সেবা নিতে এসে সর্বস্বও হারাতেন। আর হাসপাতাল এলাকাকে দালালদের অভয়াশ্রম হিসেবে গড়ে তুলতে হাসপাতালের অভ্যান্তরীণ ও বাহ্যিক প্রভাবশালী গোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্ধনও ছিলো। যাদের ছায়াতলে থেকে এই সংঘবন্ধ দালাল চক্র ডাক্তার থেকে শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও হুমকি দিতো।সুযোগ পেলেই মাথাচাড়া দিতে চাওয়া এ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যাওয়ার সাহস দেখাতো না কেউ।
তবে সম্প্রতি হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানীর রোগীবান্ধব দৃঢ় সিদ্ধান্ত, নগর নেতৃত্ব, প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় হাসপাতাল এলাকা এখন অনেকটাই দালালমুক্ত হয়েছে। সৌন্দর্যবর্ধনে বেশকিছু কার্যক্রমও পরিচালিত হচ্ছে। তবে হাসপাতালের সার্বিক সৌন্দর্যের উন্নতির ধারা অব্যাহত রাখতে রোগী ও স্বজনদের অসচেতনতাকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রামেক হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, দালালের দৌরাত্ম্য কমার পাশাপাশি হাসপাতালের সৌন্দর্য বর্ধনে বেশকিছু কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। অনেকটাই শৃঙ্খলা ফিরেছে হাসপাতালের সামনে গাড়ি পার্কিং এ। জরুরি বিভাগের সামনে নেই সেই জটলা। জরুরি বিভাগের সামনের সৌন্দর্য ফেরাতে ড্রেন নির্মাণ কাজও চলমান রয়েছে। ক্যাম্পাসের ভেতরের ড্রেনের পাশে অ্যাপ্রোম নির্মাণ করা হচ্ছে। যেখান থেকে খুব সহজেই নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার করা সম্ভব হবে।
হাসপাতালের রাস্তাগুলোর উন্নয়নের পাশাপাশি লাগানো হচ্ছে গাছ। হাসপাতালের সামনে প্রায় ১ বিঘামতো জায়গায় করা হচ্ছে ফুলবাগান। যেখানে এরইমধ্যে প্রায় পাঁচ শতাধিক জবা, পলাশসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুলগাছ লাগানো হয়েছে।পদ্মপুকুরে লাগানো শাপলা ফুলও ফুটেছে। রাজশাহী সিটি করপোরেশন এই ফুল বাগান তৈরিতে সহযোগিতা করছে। এছাড়া হাসপাতালের পরিত্যাক্ত জায়গাগুলোর সৌন্দর্য বর্ধনেও কাজ চলছে। পাশাপাশি হাসপাতালের সৌন্দর্য রক্ষায় অদক্ষ কর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে বলে জানাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় দেড় টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এরমধ্যে এক টন বর্জ্য রাজশাহী সিটি করপোরেশন নিয়ে যায়। বাকি সাধারণ বর্জ্য হাসপাতালের নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলা হচ্ছে। হাসপাতালে বাড়ানো হচ্ছে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সংখ্যা।
হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান ডা. আফরোজা নাজনিন হাসপাতালের সামনের ফুল বাগান গড়ে তোলার দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জানান, বিগত কয়েক বছরে হাসপাতালের চিকিৎসা পরিবেশে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আগের সেই দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশের অবসান হচ্ছে।
তিনি জানান, বাগান তৈরি করতে সরকারে কোন বাজেট নেই। হাসপাতাল পরিচালক বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্থ সংগ্রহ করে এই ফুল বাগান করছেন।
এরমধ্যে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন পাঁচ লক্ষ টাকা সহায়তা দিয়েছেন। তবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে রোগীর স্বজনদের উদাসীনতা থাকে। বারবার বলেও অনেককে নিয়ম মানানো যায় না। অনেকে ডাস্টবিন ব্যবহার করতে চায় না। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে। এটা হাসপাতালের সৌন্দর্য রক্ষায় বড় চ্যালেঞ্জ। তবে বর্তমান পরিচালক যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তাতে সামনের দিনে হাসপাতাল আরও কর্মীবান্ধব ও রোগীবান্ধব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ডা. আফরোজা নাজনিন।
বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের রামেক শাখার সভাপতি শাহাদাতুন নূল লাকি জানান, চিকিৎসা সেবার এই প্রতিষ্ঠানটি গত কয়েক বছরে রোগীবান্ধব ও কর্মীবান্ধব হওয়ার ক্ষেত্রে অনেক এগিয়েছে। হাসপাতাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হাসপাতাল পরিচালক আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। হাসপাতালের রোগীর সেবা যেমন সহজীকরণ হয়েছে তেমনি ভোগান্তিমুক্তও হচ্ছে। যেটা প্রশংসার।
রাজশাহী গণপূর্ত দপ্তরের অ্যাক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, রামেক হাসপাতালে ৫০ লাখ টাকা ব্যায়ে ড্রেন ও রাস্তা নির্মাণ, সংস্কার ও অ্যাপ্রোন নিমার্ণের কাজ করা হচ্ছে। আরও ৬০ লাখ টাকা ব্যায়ে ওয়েটিং রুমসহ টিনসেট ঘর নিমার্ণ কাজ চলছে। এ কাজগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন হবে।
রামেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, হাসপাতালকে রোগী ও সেবাবান্ধব করতে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। করোনা মহামারী মোকাবিলার পাশাপাশি হাসপাতালকে দালালমুক্ত ও সৌন্দর্য বর্ধনে কাজ করা হচ্ছে। দেশের কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে তিনি বেশকিছু পরিকল্পনা নিয়েছেন। যেটা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ণ করবেন।
তিনি আরও জানান, হাসপাতালের সৌন্দর্য বাড়াতে যেমন ফুল বাগান ও পরিত্যাক্ত জায়গায় গাছ লাগানো হচ্ছে। অন্যদিকে ড্রেনেজ সমস্যা সমাধানেও কাজ চলছে। এই কাজগুলো শেষ হলে এর ইতিবাচক প্রভাবটা দৃশ্যমান হবে। তবে সৌন্দর্য ধরে রাখতে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রোগী ও তার স্বজনদের অসচেতনতা। এরা ডাস্টবিনে ময়লা ফেলতে চাইনা। আর যেহেতু রোগীর আগমন-প্রস্থান চলমান। সেজন্য এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক কিছু সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যও আছে। তবে চ্যালেঞ্জ হাতে নিয়েই হাসপাতাল সেবাকে আরও উন্নত, রোগীবান্ধব ও সহজীকরণে কাজ করছি।