শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৬ পূর্বাহ্ন

News Headline :
দৌলতপুরে প্রবাসীর জমি দখলের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত শ্রীবরদীতে রাস্তার উপর দোকানপাট ভোগান্তিতে জনসাধারণ কুষ্টিয়ায় দৌলতপুর ফিলিপনগর ইউপি চেয়ারম্যান হত্যা মামলার আসামি হৃদয় গ্রেপ্তার মা‌টিরাঙ্গায় প্রীতি ফুটবল ম্যাচে স্বাগতিককে হারিয়ে ৩-২ গোলে বগুড়ার জয় সকল প্রস্তুতি শেষ তিনদিনব্যাপী সিরাজগঞ্জে জেলা ইজতেমা শুরু দুর্নীতির আর ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ আরডি’এ অথরাইজড অফিসার আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে মানুষ স্বৈরাচারমুক্ত করেছে দেশ এখন গড়ার পালা: তারেক রহমান রাজশাহীতে নার্সিং পরিক্ষা বানিজ্যের অভিযোগ রেজিস্ট্রার হালিমা ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার নিলুফার বিরুদ্ধে তজুমদ্দিনে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের স্মরণসভা পাবনা র‌্যাবের অভিযানে ৭টি ডাকাতিসহ ১৫ টি মামলার আসামী

সুন্দরগঞ্জে তিস্তা নাব্যতা সংকটে ২০ রুটে নৌ চলাচল বন্ধ 

Reading Time: 3 minutes

হযরত বেল্লাল, সুন্দরগঞ্জ গাইবান্ধা :
নদী খনন, ড্রেজিং, সংস্কার, শাসন, সংরক্ষণ না করার কারণে তিস্তায় চরম নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও পলি জমে ভরে উঠেছে তিস্তা নদী। অগভীর ভরা তিস্তা এখন মরায় পরিনত হয়েছে। নাব্যতা সংকটে ২০ রুট নৌ-চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বেকার হয়ে পড়েছে হাজারও নৌ- শ্রমিক ও জেলে সম্প্রদায়।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, শান্তিরাম, কঞ্চিবাড়ি, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদী দীর্ঘ ৫২ বছরেও ড্রেজিং এবং খনন করা হয়নি। সে কারণে তিস্তা ভরাট হয়ে এখন আবাদী জমিতে পরিনত হয়েছে। তিস্তা তার গতিপথ পরিবর্তন করে অসংখ্য শাখা নদীতে রুপ নিয়েছে। বছরে মাত্র ৬ মাস মুল নদীতে নৌকা চলাচল করে। গোটা বছর পায়ে হেঁটে পারাপার করতে হয় চরবাসিকে।
এক সময় উপজেলার পাঁচপীর, বেলকা, মীরগঞ্জ ও তারাপুর খেয়োঘাট হতে পীরগাছা, কাউনিয়া, উলিপুর, কুড়িগ্রাম, কাশিমবাজার, চিলমারি, রৌমারি, মোল্লার চর, ভূরুঙ্গামারি, দেওয়ানগঞ্জ, কামারজানি, গাইবান্ধা, সাঘাটা, ফুলছড়ি, জামালপুর, নারায়নগঞ্জ, বালাশিঘাট, ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ রুটে নৌ-চলাচল করত। বর্তমানে নাব্যতা সংকটে সবরুটে নৌ-চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। তিস্তায় হাজারও নৌ-শ্রমিক ও জেলে সম্প্রদায় নৌকা চালিয়ে এবং মাছ ধরে সংসার চালাত। সেই সব জেলে ও নৌ-শ্রমিকরা এখন বেকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। অনেকে বাপ দাদার পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশা জড়িয়ে পড়েছে।
বেলকা চরের জেলে মন্টু দাস জানান, তিস্তা নদীতে এখন আর জল থাকে না। পলি জমে নদী ভরে গেছে। নদীতে আর মাছ ধরার কোন সুযোগ নেই। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আমরা জেলেরা তিস্তা নদীতে আর মাছ ধরতে পারি না। সে কারণে অনেকে বাজারে মাছের ব্যবসা করছে। আবার অনেকে রিস্কা, ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাচ্ছে।
হরিপুর চরের নৌ-শ্রমিক আরমান মিয়া জানান, আজ থেকে ১০ বছর আগে তার পাঁচটি নৌকা ছিল। নৌকার ব্যবসা দিয়ে সে সংসার চালাত। এখন মাত্র একটি নৌকা তার। সেটিও বছরের ৪ মাস মুল নদীতে চলাচল করে। নদী ভরে উঠায় এখন আর নৌকা চলে না। সে কারণে মাঝি মাল্লারা বেকার হয়ে পড়েছে। নদী খনন বা ড্রেজিং করলে হয়তো তিস্তা তার গতিপথ ফিরে পাবে। নদীতে পানি না থাকায় বালু চরে পড়ে থাকায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে নৌকা।
বাদামের চরের ব্যবসায়ী মোন্তাজ আলী জানান, জেলা ও উপজেলা শহর হতে কাপাসিয়া ইউনিয়নের বাদামের চরের দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। নৌ-চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন বিভিন্ন যানবাহনে জেলা ও উপজেলা শহর হতে মালামাল নিয়ে এসে ব্যবসা করা অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে পড়েছে। ঘোড়ার গাড়ি ও পায়ে হাঁটা ছাড়া অন্য কোন উপায়ে চরের মধ্যে চলাচলের কোন মাধ্যম নেই। আজ থেকে ১৫ বছর আগে তারাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম জানান, তিস্তা নদী এখন আবাদি জমিতে পরিনত হয়েছে। উজানের পলি জমে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে অসংখ্য শাখা নদীতে রুপ নিয়েছে। উপজেলা শহর হতে প্রায় ২০ রুটে নৌ-চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সে কারনে চরবাসি পায়েঁ হেটে চলাচল করছে। বেকার হয়ে পড়েছে উপজেলা নিবার্হী অফিসার মোহাম্মদ আল মারুফ জানান, তিস্তা নদীতে নাব্যতা সংকট রয়েছে, এটি সত্য। এই উপজেলায় তাঁর দুই বছর চাকরির মেয়াদকাল সময়ে একাধিক বার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে  নদী সংরক্ষণ এবং খননের জন্য প্রস্তাব পাঠিছে। নদী ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়া হলেও খনন ও সংরক্ষণের ব্যাপারে কোন প্রকার সিদ্ধান আজও হয়নি।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী হাফিজুল হক (চলতি দায়িত্ব) জানান, তিস্তা নদীর সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে নদী ভাঙন রোধে জিও টিউব ও জিও ব্যাগ ফেলা প্রকল্প চলমান রয়েছে। এছাড়া নদী সংরক্ষনের জন্য ৪০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বরাদ্দে অপেক্ষায় রয়েছে। নাব্যতা সংকট দুরীকরণে নদী খনন ও ড্রেজিং এর জন্য বহুবার আবেদন পাঠানো হয়েছে। এটি উপর মহলের সিদ্ধানের ব্যাপার।
উপজেলা পরিষদ চেয়াম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম সরকার জানান, তিনি নিজেও নদী পাড়ের মানুষ। তাঁর বাড়িও কয়েক দফা নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত তিস্তা নদী সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে খনন ও ড্রেজিং করা হয়নি। সে কারনে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে নৌ-চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। নদী খনন ও ড্রেজিং করার দাবি তাঁর।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী জানান, তিস্তার কড়াল গ্রাস হতে সুন্দরগঞ্জবাসিকে রক্ষা করার জন্য বহুবার মহান সংসদে বক্তব্য দিয়েছি। নদী ভাঙন রক্ষায় জিও ব্যাগ, জিও টিউব ফেলার কাজ চলমান রয়েছে। নদী সংরক্ষণে একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। বরাদ্দ সাপেক্ষে কাজ শুরু করা হবে। তবে নদী ভাঙন রোধসহ বিভিন্ন রুটে নৌ-চলাচল চালু করতে গেলে নদী খনন ও ড্রেজিং এবং সংরক্ষণের বিকল্প নেই।

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com