বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:২০ অপরাহ্ন

News Headline :
ডিমের মূল্যের ঊর্দ্ধগতিতে মধ্যস্বত্ব ভোগীরা বড় সমস্যা- মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ উপদেষ্টা কুষ্টিয়ায় বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ এর ১৩৪তম তিরোধান দিবস ২০২৪ উদযাপনের আজদ্বিতীয় দিন ইবিতে পরীক্ষা দিতে এসে তোপের মুখে ছাত্রলীগ নেতা কুষ্টিয়ায় র‌্যাবের অভিযানে লালন মেলা হতে চুরি হওয়া ১৬টি মোবাইল ফোন উদ্ধার ন্যায় বিচার পেলে আওয়ামী লীগের জীবনের স্বাদ মিটে যাবে-নওগাঁ জামায়াত আমির রাবি’তে পরীক্ষা দিতে এসে ছাত্রলীগের ২ নেতা গ্রেফতার ফুলবাড়ীতে বিএনপি‘র দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ২ পাবনার ঈশ্বরদীতে সন্ত্রাসীদের গুলি ল্যাংড়া বিপু গুলিবিদ্ধ পাবনায় স্বপনের অফিস ভাংচুর করলেন শিমুল সমর্থক হামলা-পাল্টা হামলা পাবনা র‌্যাবের অভিযানে পর্নগ্রাফি মামলার পলাতক আসামী গ্রেফতার

জিয়াউর রহমানকে খলনায়ক বানাতে চায় আ.লীগ: ফখরুল

Reading Time: 4 minutes

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ তুলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জিয়াউর রহমান ‘স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে’ যুদ্ধ শুরু করেছিলেন, সেখানে তাঁকে খলনায়ক বানানোর প্রক্রিয়া চলছে।
মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমানের ভূমিকা জনগণের সামনে তুলে ধরার জন্য এ বিষয়ে গবেষণায় মনোযোগী হতে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে সাদা দল প্রকাশিত ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান: ইতিহাসের ধ্রুবতারা’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন ও প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।

বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে একটা প্রচারণা শুরু হয়েছে যে জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক ছিলেন না। অনেকে বলে যে মুক্তিযুদ্ধ করেননি, পাকিস্তানের অনুচর ছিলেন। বিভিন্নভাবে তাঁকে খলনায়কে পরিণত করতে চায়। কিছু কিছু বইয়ে শিশুদের শেখানো হয় যে জিয়াউর রহমান একজন খুনি, অর্থাৎ শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন। আমরা যাঁরা শহীদ জিয়ার আদর্শ ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করি, এটাকে আমাদের কাউন্টার করতে হবে। এই বয়ানের জায়গায় আমাদের আসতে হবে।’

আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত এত জনপ্রিয় একটা রাজনৈতিক দল (আওয়ামী লীগ) ও অবিসংবাদিত একজন রাজনৈতিক নেতা কী কারণে এ দেশের মানুষের ‘আস্থা হারালেন’, এ বিষয়গুলো জানা ও বোঝা দরকার। যাঁর যা পাওনা, তা তাঁকে দিতে হবে। যিনি (জিয়াউর রহমান) ঘোষণা দিয়ে একটা দেশের যুদ্ধ শুরু করলেন, তাঁকেই বাদ দেওয়া হলো। নিজেদের লোকগুলোকেও তারা বাদ দিয়েছে। তাজউদ্দীন আহমদ, জেনারেল এম এ জি ওসমানীর নাম তারা উচ্চারণ পর্যন্ত করে না। এই হচ্ছে তাদের ইতিহাস।

দলীয় পরিচয়ের বাইরে গিয়ে কাজ করার জন্য সাদা দলের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘একেবারে দলীয় সংগঠনে পরিণত হওয়াটা বোধ হয় দল, রাজনীতি ও নিজেদের জন্য ভালো হবে না৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দল নিজস্ব স্বকীয়তা নিয়ে গড়ে উঠবে, বাইরে থেকে আমরা তা-ই আশা করি। তাঁরা যখন কোনো কথা বলবেন, পুরো জাতি যেন তা অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শোনে, সে রকম হওয়া উচিত বলে আমার কাছে মনে হয়।’

এখন পুরো দেশ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্য যে আমাদের দেশ এখন পুরো দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে—আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। ফলে যা হয়েছে, একজন মানুষ যখন গুরুত্বপূর্ণ কথাও বলছেন, অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না যে তিনি হয়তো বিএনপি বা আওয়ামী লীগের লোক। এ বিষয়গুলো থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা দরকার। কারণ, যাঁকে নিয়ে আজকে আলোচনা হচ্ছে, সেই শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কিন্তু জাতীয় ঐক্যে বিশ্বাস করতেন, বিভক্তিতে বিশ্বাস করতেন না। ১৯৭২-৭৫ সালে গোটা জাতিকে আওয়ামী লীগ যখন বিভক্ত করে দিয়েছিল, সেই অবস্থা থেকে জাতিকে বের করে নিয়ে এসে এক ঐক্যবদ্ধ জাতিতে পরিণত করেছিলেন জিয়াউর রহমান।’

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের জীবনী, তাঁর কাজ-রাজনীতি ও দর্শনের বিষয়ে গবেষণাধর্মী কাজ খুব কম আছে। এ বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ কাজ করার জন্য সাদা দল উদ্যোগ নিতে পারে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের রাজনীতির ওপর গবেষণা করে কিছু কাজ করতে পারলে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে। নতুন প্রজন্ম জিয়াউর রহমানকে চেনে না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসও তারা ‘সঠিকভাবে জানে না’। তাদের যা জানানো ও শেখানো হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ ‘বিকৃত একটা ইতিহাস’। একদিনে তো বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। দীর্ঘকাল ধরে একটা স্বাধীন অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম করেছে মানুষ, এটা মুহূর্তেই হয়নি।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, যখন চতুর্দিক শূন্য, যখন মানুষ আশা করছে যে বোধ হয় স্বাধীনতার ঘোষণা হবে, যে রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায়িত্ব ছিল তা ঘোষণার, তাঁরা তা করেননি। তাঁদের কেউ আত্মসমর্পণ করেছিলেন, কেউ পালিয়ে গিয়েছিলেন। সেই সময় স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে জিয়াউর রহমান গোটা জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে নেমে পড়ার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিলেন। তিনি কোনো রাজনীতিক ছিলেন না, পুরো সেনাবাহিনীরও নেতৃত্বে ছিলেন না। এখানেই তাঁর নেতৃত্বের বিষয়টি এসে যায়। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরেও জাতি যখন অন্ধকারে, সেই সময় তিনি সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। এগুলো নিয়ে আরও গবেষণা হওয়া দরকার।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ। নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে কাজ করার বিরল সৌভাগ্য আমার হয়েছে। দেশপ্রেমিক সেনানায়ক থেকে যিনি রাষ্ট্রনায়কে পরিণত হয়েছিলেন, তাঁর নাম জিয়াউর রহমান বীর উত্তম।

শহীদ জিয়া জানতেন, জাতীয় ঐক্য হলো জাতীয় নিরাপত্তার দুর্ভেদ্য দুর্গ। এই দুর্গ সুরক্ষিত থাকলেও ঐক্যও সুরক্ষিত থাকে। দেশের কল্যাণে তিনি জীবনপণ লড়াই করে গেছেন। বিশ্বাস করতেন, ঐক্য হলো আমাদের শক্তি। সে জন্যই তিনি জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছিলেন, জনগণের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। জনগণের কল্যাণে ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন, যা সবাই পছন্দ করেছিল। তারপরও গণভোট করে জনগণের সমর্থন নিয়েছিলেন। দেশে তিনি স্বনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। প্রশাসনকে তৃণমূলে পৌঁছে দিতে গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী করেছিলেন। তাঁর অনন্য দেশপ্রেম, কর্মোদ্যোগ সৎ ও নির্ভীক মানসিকতা তাঁকে মহামানবে পরিণত করেছে।’

নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, জিয়া পরিবারকে মুছে দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা ক্ষমতাসীনেরা করতেই পারে। কিন্তু এতে কোনো লাভ হবে না। কারণ, জিয়া যখন সৈনিক ছিলেন, সৈনিকেরা তাঁকে বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা করতেন, জনগণও তাঁকে বিশ্বাস করত। শাহাদতবরণের পর বিশ্বের ‘সর্ববৃহৎ জানাজা জিয়ার জনপ্রিয়তার প্রমাণ’। সেই জানাজা ছিল অশ্রুসিক্ত মানুষের উপস্থিতির জানাজা।

জিয়াউর রহমানের সমালোচকদের উদ্দেশে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘আজকে যাঁরা শহীদ জিয়া সম্পর্কে আজেবাজে কথা বলেন, তাঁদের বলব যে যেকোনো কিছু বলার ন্যূনতম যোগ্যতা থাকা দরকার। আপনারা যত নেতা আছেন, দোয়া করি সবাই শতবর্ষী হোন। কিন্তু মারা যাওয়ার পর আপনাদের সবার জানাজার মানুষের সংখ্যা একত্র করে যেদিন জিয়াউর রহমানের জানাজার সমান হবে, সেই দিন সমালোচনা করার যোগ্যতা অর্জন করবেন।’

ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেন, জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ বাঙালি মুসলমানের জন্য বিরাট পরিচয়। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ হচ্ছে ‘সবচেয়ে বড় সেক্যুলারিজম’। জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি এর অবতারণা করেছিলেন। ১২ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের’ কাজ হলো ঋণ করে ঘি খাওয়া এবং জিয়াউর রহমান ও তাঁর পরিবারকে খলনায়ক বানানো। জিয়াউর রহমানের অবদানের কথা বলতে আওয়ামী লীগের ‘লজ্জা লাগে’।

অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী ও সাবেক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ্। আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী অভিযোগ করেন, বর্তমান সরকারের সময়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বায়ত্তশাসন ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। দেশে জবাবদিহিমূলক সরকার না থাকায় প্রশাসনেরও জবাবদিহি নেই। আদালতও তাদের দখলে। তিনি বলেন, ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর শিক্ষকদের অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়েছিল সাদা দল। আদর্শের মিল থাকলেও সাদা দল করলেই যে বিএনপি করতে হবে, এমন কোনো কথা নেই।

মাহবুব উল্লাহ্ বলেন, ‘বাংলাদেশ অর্জনের সংগ্রামের একজন পুরোধা পুরুষ শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান৷ তাঁর জন্য আমাদের কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা৷ তাঁকে মনে রাখলে, তাঁর সততা-দেশপ্রেম-কর্মনিষ্ঠ ও দক্ষতা চর্চা করতে পারলে আমরা সত্যিকার অর্থে সুখী-সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ তৈরি করতে পারব।’

প্রকাশিত গ্রন্থটির সম্পাদনা পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সহসম্পাদক ও ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাকরিচ্যুত শিক্ষক মোর্শেদ হাসান খান। প্রকাশিত গ্রন্থের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বক্তব্য দেন এর নির্বাহী সম্পাদক ও সাদা দলের নেতা মোহাম্মাদ ছিদ্দিকুর রহমান।

‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান: ইতিহাসের ধ্রুবতারা’ সাদা দল প্রকাশিত প্রথম কোনো গ্রন্থ। এই গ্রন্থে ১৩টি নিবন্ধ ও ১টি বিশেষ নিবন্ধ রয়েছে। জিয়াউর রহমানের দুটি লেখাও এতে সংকলিত হয়েছে। বিশেষ নিবন্ধটি লিখেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। নিবন্ধ লেখকদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দীন আহমদ, সাবেক উপাচার্য আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান আসিফ নজরুল।

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com