বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:১৭ পূর্বাহ্ন

News Headline :
ইউপি চেয়ারম্যানের উপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন মারিশ্যা-দীঘিনালা সড়কের মাটি সরে গিয়ে দূর্ভোগে জনগণের সেবা দেওয়ার জন্যই সরকার আমাকে পাঠিয়েছেঃ-নওগাঁর নবাগত ডিসি রাজশাহীতে শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় ৫ দিনের রিমান্ডে শুটার রুবেল পাবনায় সাংবাদিকের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত ও মতবিনিময় করলেন নবাগত জেলা প্রশাসক মধুপুরে বৈষম্যবিরোধী ও কোটা আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে  বিএনপির দোয়া  মাহফিল অনুষ্ঠিত  পাবনার হেমায়েতপুরে কারামুক্ত বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংবর্ধনা ও আঞ্চলিক কার্যালয়ের উদ্বোধন বাঘাইছড়িতে বিএনপির দুই নেতা বহিষ্কার ডোমারে সীরাতুন্নবী (সাঃ) মাহফিল অনুষ্ঠিত পাবনার সুজানগরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পথসভা অনুষ্ঠিত

রংপুর বিভাগে জাতীয় পার্টির দূর্গে চরম ভরাডুবি হতাশ তৃণমূল নেতাকর্মীরা

Reading Time: 4 minutes

হারুন উর রশিদ সোহেল,রংপুর:
রংপুর বিভাগকে বলা হতো জাতীয় পার্টির দূর্গ। দলটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও প্রয়াত রাস্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের বাড়ি রংপুরে হবার কারণে এই অঞ্চলে দলটির দূর্গ পরিনত হয়। এরশাদের মৃত্যুর পর সেই দূর্গে ফাটল ধরে। যা গত স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে লক্ষ্য করা গেছে। তবে এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সেই নিজেদের দুর্গে চরম ভরাডুবি হয়েছে। অনেকেই পরাজয়ের নেপথ্যে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলসহ জনগণের মতামতের মূল্যায়ন না করাকে দুষছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই সেই চিত্র প্রকট হয়ে উঠছিল।
রংপুর বিভাগের আট জেলার ৩৩টি আসনের মধ্যে তারা মাত্র এই ৩টিতে জয় পেয়েছে। কোথাও শক্ত প্রতিদ্ব›িদ্বতাও গড়তে পারেননি জাতীয় পাটির প্রার্থীরা। এসব আসনে নৌকা প্রতীক ছিল না বলেই জয় এসেছে। না হয় এগুলোতেও পরাজয় হতে পারত বলে মনে করছেন স্থানীয় ভোটাররা। সমঝোতার রাজনীতিতে নিজেদের সাংগঠনিক সক্ষমতা ধ্বংস, বলছেন নেতাকর্মীরা। এছাড়াও প্রচার-প্রচারণা ও তৃণমুলে সমন্বয়, শীর্ষ নেতৃত্বের সঠিক নির্দেশনা না থাকাকেই দায়ি করেছেন অনেকেই। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদবিহীন এ দলের এমন পরিণতি মেনে নিতে পারছেন না নেতাকর্মীরা। ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে দলের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত তারা।
এদিকে আসন সমঝোতার ২৬ আসনের মধ্যে রংপুর বিভাগে ছিল ৯টি। এর মধ্যে মাত্র ৩টি আসনে জিততে পেরেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। তারা হলেন, রংপুর-৩ আসনে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এবং কুড়িগ্রাম-১ আসনে একেএম মোস্তাফিজুর রহমান। বাকি ছয়জনের কেউই আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্ব›িদ্বতা গড়ে তুলতে পারেননি। নীলফামারী-৩ আসনে রানা মোহাম্মদ সোহেল, নীলফামারী-৪ আসনে আহসান আদেলুর রহমান, রংপুর-১ আসনে হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ, কুড়িগ্রাম-২ আসনে পনির উদ্দিন আহমেদ, গাইবান্ধা-১ আসনে ব্যারিস্টার শামীম পাটোয়ারী এবং গাইবান্ধা-২ আসনে মো. আব্দুর রশিদ সরকার হেরে গেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, রংপুর জেলায় গত নির্বাচনে দুজন জয়ী হলেও রংপুর-৩ আসনে এবার জাতীয় পার্টি থেকে কেবল জিএম কাদের জিতেছেন। তিস্তা নদীবেষ্টিত রংপুর-১ আসনে গঙ্গাচড়ায় নৌকার প্রার্থী না থাকলেও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্রের কাছে নাস্তানুবাদ হয়েছেন এরশাদের ভাতিজা এবং সাবেক সংসদ সদস্য হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ ও বর্তমান সংসদ সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ। এই আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন আসাদুজ্জামান বাবলু।
স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘ ৩৭ বছর পর নাড়ির টানে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে পেরেছেন তারা। আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর জয়ের মধ্য দিয়ে এ আসনে জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ দুমড়ে-মুচড়ে পড়বে বলে মনে করছেন অনেকে।
লালমনিরহাটের তিনটি সংসদীয় আসন একসময় জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল। দলের প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর সেই দুর্গ ভেঙে খান খান হয়ে গেছে। টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার সুবাদে এই দুর্গে এখন শক্ত ঘাঁটি গেড়েছে আওয়ামী লীগ। এবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তার প্রতিফলন ঘটেছে। তিন আসনেই নৌকা জিতেছে। জাতীয় পার্টির কর্মীরা এখন হতাশ হয়ে বিভিন্ন দলে ভিড়ছেন। তাদের মতে, নিজেদের দুর্গেই দুর্গতিতে পড়েছে জাতীয় পার্টি।
একই চিত্র নীলফামারীতেও। এ জেলার চারটি আসনেই ভরাডুবি হয়েছে জাতীয় পার্টির। এরশাদ পরিবারের সদস্য ও বর্তমান এমপি আহসান আদেলুর রহমানকে আওয়ামী লীগ ছাড় দিলেও জয়ের মালা গলায় তুলতে পারেননি তিনি। নীলফামারীর চারটি সংসদীয় আসনের দুটি আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক ও দুটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। নীলফামারী-৩ আসনে রানা মোহাম্মদ সোহেল এবং নীলফামারী-৪ আসনে আহসান আদেলুর রহমানকে ছাড় দিয়ে ওই দুটি আসনে নৌকা রাখেনি আওয়ামী লীগ। তারপরও জিততে পারেননি জাতীয় পার্টি।
গাইবান্ধাও একসময় জাতীয় পার্টির দুর্গ ছিল। দিনে দিনে সেই দুর্গে চরম দুর্দিন নেমে এসেছে। এবার এ জেলার পাঁচটি আসনের দুটিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা হলেও কাঁধে লাঙ্গল নিয়ে সংসদে দাঁড়ানোর সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী ও আব্দুর রশিদ সরকারের। বাকি তিনটি আসনে নৌকার কাছে পাত্তাই পায়নি জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা।
এদিকে কুড়িগ্রামের চারটি সংসদীয় আসনের একটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। বাকি তিনটির দুটিতে আওয়ামী লীগের নৌকা ও একটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। এ জেলার দুটি আসনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে ছাড় দিলেও জিতেছেন কেবল কুড়িগ্রাম-১ আসনে এ কে এম মুস্তাফিজুর রহমান। ছাড় পাওয়া আরেক প্রার্থী পনির উদ্দিনের ভরাডুবি হয়েছে।
ভোট বিশ্লেষণে দেখা যায়, সমঝোতার আসনগুলোর মধ্য থেকেই ১১টিতে জয়ের দেখা পেয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। বাকি কোথাও তারা জিততে পারেননি। এমনকি কোথাও শক্ত প্রতিদ্ব›িদ্বতাও গড়তে পারেননি।
আওয়ামী লীগ ছাড় দেওয়া সত্তে¡ও ভোটে জিততে না পারাকে বড় ধরনের ব্যর্থতা বলে মনে করছে জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে বছরের পর বছর সমঝোতা করে দেওয়ার ফলেই এমন ভয়াবহ ভরাডুবির শিকার হতে হয়েছে বলে মনে করছেন দলের নেতাকর্মীরা।
তৃণমূলের কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, সমঝোতার রাজনীতিতে নিজেদের সাংগঠনিক সক্ষমতা ধ্বংস হয়েছে। এবারের নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা ও তৃণমুলে সমন্বয়, শীর্ষ নেতৃত্বের সঠিক নির্দেশনা না থাকা নানান অভিযোগ করেছেন তারা। একই সঙ্গে পরাজয়ের নেপথ্যে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলসহ জনগণের মতামতের মূল্যায়ন না করাকে দুষছেন।
পীরগাছা উপজেলার শহিদুল ইসলাম ও জিল্লার রহমান এবং রংপুর সদরের আনিছ মিয়া, ঝন্টু মিয়াসহ কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, রংপুর অঞ্চল এক সময় জাতীয় পার্টি দূর্গ হলে এখন আর নেই। কতিপয় নেতার হাতে জিম্মি দল। একারণে গত স্থানীয় নির্বাচনসহ গতকাল রোববারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরুপ ফলাফল হয়েছে। দলের একেক সময় একেক নীতি, নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধ ও সমঝোতার রাজনীতির কারণে এমন করুণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তারা ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে দলের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত রয়েছে।
এর আগে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রথম নির্বাচনী জোট হয় ২০০৮ সালে। ওই নির্বাচনে মহাজোট সঙ্গী জাতীয় পার্টিকে ৩২ আসন ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। আর উন্মুক্ত ১৭টি আসনে উভয় দলের প্রার্থীরা নিজ নিজ প্রতীকে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় ২০ আসনে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ১৩ আসনে বিজয়ী হন। এরপর ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টিকে দেওয়া হয় ২৯টি আসন। তারা শেষ পর্যন্ত ২২টি আসনে জয়লাভ করে সংসদে প্রধান বিরোধী দল হয়ে ওঠে। এবার ১১টি আসন দিয়ে জাতীয় পার্টি কেমন বিরোধী দল হবে, সেই প্রশ্ন যেমন দেখা দিয়েছে তেমনি দুর্গখ্যাত রংপুরের রাজনীতিতে দলটি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি না সেটিও এখন দেখার বিষয়।
প্রসঙ্গত, এবার জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে ২৮৩টি আসনে প্রার্থী দেওয়া হয়েছিল। ১১ জন প্রার্থী নিজে থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। নির্বাচন কমিশনের যাচাই-বাছাইয়ের পর শেষ পর্যন্ত টিকে থাকেন ২৬৫ জন প্রার্থী। তবে প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী দল থেকে সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ার কারণে নির্বাচনী প্রচার শুরুর পর থেকে ভোটের আগের দিন পর্যন্ত ১৯ জন সরে দাঁড়ান। শেষ পর্যন্ত ভোটে ছিলেন ২৪৬ জন।

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com