বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০০ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
জুয়েল ইসলাম তারাগঞ্জ রংপুর :
‘সুন্দর আমের তলোত ঘুন’ কথাটি গ্রাম বাংলার মানুষের মুখে মুখে শোনা গেলেও আজ তা বাস্তবে রুপ নিয়েছে। চার-পাঁচ বছর আগে বাজার থেকে সন্দেহ ছাড়াই আম কিনে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ইচ্ছে মতো খেতে পেরেছি। কিন্তু এখন আর তা সম্ভব হচ্ছে না। তারাগঞ্জ বাজারে আম কিনতে আসা জুয়েল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি এভাবে বিড় বিড় করে কথাগুলো বলছিলেন আর এদিক ওদিক দেখছিলেন। ওই সময় তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘কোথায় ভ্রাম্যমাণ আদালত? কোথায় ভোক্তা অধিকার? আর কোথায় নিরাপদ খাদ্য অধিদফতর? তাদেরকে অনুরোধ করছি তারা যেনো নিয়মিত বাজার মনিটরিং করেন। বাজারে অপরিপক্ক আম ব্যাঙের ছাতার মতো ছেয়ে গেছে। এত আগে আম পাকছে কিভাবে?’ তারাগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অপরিপক্ক ফলের মধ্যে আম ছাড়াও বাজারে এসেছে কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো লিচু। বোঝাই যাচ্ছে এসব ফল এখনো ঠিক মতো পাকেনি। অপরিপক্ক আমের বিষয়ে জানাতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, আমরা ব্যবসায়ী, আমরা কিছুই আনি না। এখানে এনে দিয়ে যায়। আমরা শুধু বিক্রি করি। যাদের দরকার তারা নিয়ে যায়। আমরা কাউকে জোর করে দেই না। এসব অপরিপক্ক ফল যদি বাজারে না আসতো তাহলে আমরা বিক্রি করতাম না। তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছর ধরে ফলের বাজার ভালোই ছিল। ক্রেতাদের মধ্যে কোনো অভিযোগ ছিল না। এখন আবার অপরিপক্ক ফল ওঠা শুরু হয়েছে। ফলে ক্রেতাদের মধ্যে কেমিক্যাল মেশানো ফল কিনতে অনিহা শুরু হয়েছে। উপজেলার সবচেয়ে বড় ফলের বাজার তারাগঞ্জ। আম, লিচু, তরমুজ, পেয়ারা, আনারস, জামরুল সাজানো রয়েছে তাছনিয়া ফল ভান্ডারে। মালিক নুরুজ্জামান বলেন, স্যার আপনি সাংবাদিক। আপনার কাছে কিছুই লুকাবো না। আমার দোকানে যত ফলমূল আছে এর মধ্যে আম, লিচু ছাড়া নিঃসন্দেহে কিনতে পারেন। আমগুলো অপরিপক্ক ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে পাকানো হয়েছে। লিচুগুলো এখনো পরিপূর্ণ হয়নি। এই ফলগুলো বেশি দামের আশায় পরিপক্ক হওয়ার আগেই গাছ থেকে ছেড়া হয়েছে। কারা এগুলো বাজারে নিয়ে এসেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক সময় কৃষক নিজেই বেশি মুনাফার আশায় অপরিপক্ক ফল নিয়ে আসে। আবার অনেক সময় ব্যবসায়ীরাও জোর করে নিয়ে আসায়। আবার ব্যবসায়ীরা অনেক সময় অগ্রীম টাকা দিয়ে বাগান কিনে রাখে। ফলে তাদের কর্তৃত্বটা বেশি থাকে। আম কিনে প্রতারিত হয়েছেন মজিবর রহমান নামের এক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, ২৫০ টাকা কেজি দরে আম কিনেছিলাম। বাসায় এনে আম কাটতে গিয়ে দেখি আমে কোনো আটি নেই। এমনকি গন্ধও নেই। এটা যে আম নামক ফল তার কোনো কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না। কোনোটার বাহিরে শক্ত আবার কোনোটার ভিতরে কালো হয়ে গেছে। যে ভাব নিয়ে বাজার থেকে আম কিনে বাসায় এসেছি, কাটার পর নিজেই ফিউজ হয়ে গেছি। তার দাবি, তারাগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন বাজারে অবিলম্বে অভিযান পরিচালনা করা দরকার। সুজন ইসলাম নামের এক ক্রেতা বলেন, বাজারে মৌসুমী ফল এলেই মানুষের মধ্যে ফরমালিনের আতঙ্ক ভর করে। অসাধু ব্যবসায়ীরা ফলে ফরমালিন ও কেমিক্যাল মিশিয়ে অপরিপক্ক ফল পাকানোর পর বিক্রি করেন। যার কারণে ফরমালিন আতঙ্কে ফল কিনতে ভয় হয়। ফল ব্যবসায়ী হাসানুর রহমান বলেন, মৌসুমী ফল বাজারে এলে প্রথম দিকে দামটা একটু বেশি থাকে। তবে মানুষ বেশি দাম দিয়েই সেগুলো কিনে। এখন যে ফল বিক্রি করছি তার মধ্যে আমে কম বেশি কেমিক্যাল মেশানো হয়। ক্রেতা ধরে রাখতে বাধ্য হয়ে এভাবে বিক্রি করতে হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমিনুল ইসলাম বলেন, বাজারে যাতে অপরিপক্ক ফল বিক্রি করতে না পারে এ জন্য খুব দ্রুত ফল বাজারকে মনিটরিংয়ের আওতায় আনা হবে।